চুল পড়া কমায় যে সব খাবার

চুল পড়া কমিয়ে চুল কালো-ঘন-মজবুদ ও সুন্দর রাখে যে সব খাবার

চুল আমাদের সৌন্দর্যের একটা গুরুতবপুর্ন অংশ। যখন আমাদের চুল পড়তে থাকে বা রুক্ষ –শুষ্ক হয়ে পড়ে বা সুন্দরয্য কমে যায়, তখন আমাদের মন টা খারাপ হয়ে যায়। পাশাপাশি কনফিডেন্স নষ্ট হয়ে যায়। চুল পড়া রোধে এবং চুলকে ঘন-কালো- মজবুদ ও লম্বা করতে বেশ কিছু খাবার খুব ভালো কাজ করে থাকে।

১। প্রোটিন জাতীয় খাবার-

চুলের পুষ্টিতে প্রোটিন জাতীয় খাবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চুলের প্রায় পুরাটায় প্রোটিনের তৈরি। খাবারে প্রোটিনের অভাবে চুল পড়া শুরু হয়। এই ক্ষেত্রে  – 

টকদই- এটি প্রোটিনের খুব ভালো উৎস। এতে রয়েছে পর্যাপ্ত লিন-প্রোটিন, আয়রন, জিংক। যা চুলের গুড়া মজবুদ ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।

ডিম- সুন্দর চুলের জন্য ডিম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডিম থেকে ভালো মানের প্রোটিন, বায়োটিন, সেলেনিয়াম, ভিটামিন- বি১২, আয়রিন ইত্যাদি পাওয়া যায়। যা চুল ঘন-কালো- মজবুদ ও সুন্দর রাখতে  সাহায্য করে।

ছোলা- ছোলাতে রয়েছে আয়রন, জিংক ও ভালো মানের প্ল্যান্ট-প্রোটিন, যা চুলের জন্য বেশ উপকারি। এই তিনটির যেকোন একটির অভাবে চুল পরতে পারে।

ডাল- ডালে রয়েছে  ভালো মানের প্ল্যান্ট-প্রোটিন, যা চুলের জন্য বেশ উপকারি। তাছাড়া আয়রন, জিংক ও ফোলেট, যা চুল ঘন-কালো- মজবুদ ও সুন্দর রাখতে  সাহায্য করে। আয়রন চুলের গুড়া ও তালুতে আক্সিজেন সরবরাহ করে।

২।  ভাল-স্বাস্থ্যকর ফ্যাট বা চর্বি-

তৈলাক্ত মাছ- তৈলাক্ত মাছে থাকে ভাল-স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও প্রোটিন। তৈলাক্ত মাছে থাকে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড। যা চুল ঘন-কালো- ঝলমলে করতে সাহায্য করে। সামদ্রিক মাছ যেমন- সেলমন, কড এগুলোতে পর্যাপ্ত ওমেগা-৩ ফ্যাট পাওয়া যায়। আমাদের দেশীয় মাছ যেমন-ইলিশ, কই, চাপিলা,মলা এগুলোতেও ভালো পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাট পাওয়া যায়।

বীজ- বিভিন্ন ধরনের বীজে থাকে ভাল প্রোটিন, যেমন- চিয়া সিড, মিষ্টিকুমড়ার বীজ, সূর্যমুখীর বীজ, তিসীর বীজ ইত্যাদি। চিয়াসিডে থাকে আলফা লিনোলেনিক এসিড , যা এক প্রকার ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড। মিষ্টিকুমড়ার বীজে পাওয়া যায় জিংক। সূর্যমুখীর বীজে থাকে বায়োটিন এবং তিসীর বীজে আছে সেলেনিয়াম। যা চুল ঘন-কালো- মজবুদ ও লম্বা রাখতে সাহায্য করে।

বাদাম- বাদামে থাকে  ভাল প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। বাদামে থাকা ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড চুলের গুড়া মজবুদ করতে ও চুল লিম্বা করতে সাহায্য করে।

৩।  শাকসবজি ও ফলমূল-

হলুদ ও কমলা রঙের শাকসবজি ও ফলমূল- যেমনঃ মিষ্টি আলু, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, আম,পেপে এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন –এ থাকে। যা চুলের গুড়া বা ফলিকলে পুষ্টি  যোগাতে সাহায্য করে।

পালংশাক- চুলের ভেতোর থেকে পুষ্টি যুগাতে পালংশাক খুব ভাল কাজ করে থাকে। এতে থাকা ভিটামিন –এ, ভিটামিন- সি, আয়রিন, ফোলেট চুলকে ঘন-কালো ও সুন্দর রাখতে সাহায্য করে।

টকফল-  যেমনঃ আমলকী,কমলা, মাল্টা, লেবু, কিউই, টমেটু, পেয়ারা, আমড়া এগুলোতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন –সি। যা চুলকে শক্ত-মজবুদ ও সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। ভিটামিন –সি  এর অভাবে চুল বেঁকে বা পেঁচিয়ে যাওয়ার মত একধরনের রোগ হয়। ভিটামিন –সি আমাদের শরীরে আয়রন শোষণে সাহায্য করে। যা চুলের গুড়া মজবুদ করতে সাহায্য করে।

৪।  চুলের বাহ্যিক যত্ন-

মাথায় তেল ব্যাবহার – মাথায় সাপ্তাহে দুই থেকে তিনদিন তেল ব্যাবহার করতে পারেন। যেকোন সিড-অয়েল বা কদুরতেল বা বাদামের তেল বা নারিকেল তেল ব্যাবহার করতে পারেন। যা চুলের গুড়া মজবুদ ও চুল ঘন করতে সাহায্য করে।

চুলে মেহেদী ব্যাবহার – চুলে সাপ্তাহে একবার মেহেদী ব্যাবহার করতে পারেন। মেহেদী চুলের গুড়া মজবুদ ও চুলপড়া রোধে সাহায্য করে। মেহেদীর সাথে জবাফুল মিশিয়ে ব্যাবহার করলে চুল শাইনি হয়।

চুল ভালোভাবে পরিষ্কার করা–  চুলে সাপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন শ্যাম্পু ব্যাবহার করতে পারেন। কিন্তু শ্যাম্পুর পর অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যাবহার করতে হবে। ভেজা চুল বেঁধে রাখা যাবেনা। সব সময় হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকানু যাবেনা। হালকা বাতাসে চুল শুকানু যায়।

অনেক কারনেই চুল পরতে পারে, যেমন- পুষ্টির অভাব, ভিটামিনের অভাব, থায়রয়েডের অভাব, রক্ত শূন্যতা, টাক-পরা রোগ ইত্যাদি। প্রয়োজনে ডাক্তারের ও ডায়েটিশিয়ান পরামর্শ নিন।

 

পথ্য ও পুষ্টিবিদ- সৈয়দা শিরিনা (স্মৃতি)

সিনিয়র ডায়েটিশিয়ান ও ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট
এবং বিভাগীয় প্রধান, বিআরবি হসপিটালস লিমিটেড, ঢাকা।
প্রাক্তন ডায়েটিশিয়ান, এপোলো হসপিটালস ঢাকা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!